হায়েজ অবস্থায় মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি জেনে নিন
এখন আমরা হায়েজ অবস্থায় মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি ? তা সম্পর্কে জানব। মাসিক অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত করা যায় না এটা আমরা জানি। কিন্তু মোবাইলে কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে কিনা এটা হচ্ছে প্রশ্ন। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা এই আর্টিকেলে হায়েজ অবস্থায় মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি সে বিষয়ে আলোচনা করব।
পবিত্র কোরআন আল্লাহর মহান বাণী। তাই কোন ব্যাক্তি যদি কোরআন তেলাওয়াত বা স্পর্শ করতে চায় তাকে পবিত্র হতে হয়। তবে অনেকের মনে প্রশ্ন আমি তো অপবিত্র অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করছি না শুধু তেলাওয়াত করব এটা শুদ্ধ হবে কিনা। চলুন তাহলে আর দেরি না করে হায়েজ অবস্থায় মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি তা জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ- হায়েজ অবস্থায় মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি
- হায়েজ কি
- হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান আল কাউসার | হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়া যাবে কি |হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান আহলে হক মিডিয়া
- হায়েজ অবস্থায় মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি | মাসিক অবস্থায় মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি | মাসিক অবস্থায় সূরা পড়া যাবে কি
- হায়েজ অবস্থায় দরুদ পড়া যাবে কি
- হায়েজ অবস্থায় হাদিস পড়া যাবে কি | মাসিক হলে কি হাদিসের বই পড়া যায়
- হায়েজ অবস্থায় কায়দা পড়ার বিধান
- হায়েজ অবস্থায় কি দোয়া কবুল হয়
- হায়েজ অবস্থায় কি কি করা যাবে না
- মাসিক অবস্থায় ওযু করা যাবে কি
- হায়েজ অবস্থায় কুরআন শোনা যাবে কিনা | মাসিক অবস্থায় কুরআন শোনা যাবে কি
- মাসিক অবস্থায় কি আমল করা যায় | পিরিয়ডের সময় কি কি আমল করা যায়
- মাসিক অবস্থায় দোয়া ইউনুস পড়া যাবে কি
- অনিয়মিত মাসিক হলে নামাজ পড়া যাবে কি
- পিরিয়ড অবস্থায় কি তাসবিহ পড়া যাবে
- লেখকের মন্তব্য
হায়েজ কি
হায়েজ ইহা আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো প্রবাহিত হওয়া। কোন অসুখ বা আঘাত ছাড়া নিদিৃষ্ট সময়ে নারীর জরায়ুর গভীর থেকে যে রক্ত প্রবাহিত হয় তাকে হায়েজ বলে। বাংলায় একে মাসিক বা পিরিয়ড় বা রজঃস্রাব বলে।
আরো পড়ুনঃ- বাচ্চা হলে আযান দেওয়ার নিয়ম জেনে নিন
নারীর গর্ভাশয়ে আল্লাহ এ রক্ত সৃষ্টি করেছেন যাতে গর্ভের বাচ্চা তা খাবার হিসেবে গ্রহণ করতে পারে এবং গর্ভের পরে এ রক্ত মায়ের স্থনে দুধ হয়ে রুপান্তরিত হয়। নারী গর্ভবর্তী অথবা দুগ্ধ দানকারিনী না হলে গর্ভাশয়ের রক্ত ব্যবহৃত হওয়ার কোন স্থান থাকে না ফলে তা জরায়ু দিয়ে নির্গত হয়।
হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান আল কাউসার | হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়া যাবে কি | হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান আহলে হক মিডিয়া
হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়া যাবে কি না তা জানতে চেয়ে আপনারা গুগলে সার্চ করেছেন। এ ব্যপারে ২টি মত রয়েছে। এখন আমরা সেই ২টি মত সম্পর্কে জানব।
১ম মতঃ- সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলামিক স্কলারদের মত হলো, হায়েজ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে না। কারণ, নবী ( সাঃ ) গোসল ফরজ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত করতে নিষেধ করেছেন। হায়েজও গোসল ফরজ হওয়ার অবস্থা। যার কারণে এই সময় কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে না।
আরো পড়ুনঃ- ওযু ছাড়া মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি বিস্তারিত জেনে নিন
২য় মতঃ- আরব বিশ্বের কিছু কিছু ইসলামিক স্কলারদের মত হলো, তেলাওয়াত করা যাবে।
নিরাপদ হলোঃ- কুরআন তেলাওয়াত না করা, তবে কুরআন তেলাওয়াত শোনা যেতে পারে।
হায়েজ অবস্থায় মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি | মাসিক অবস্থায় মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি |মাসিক অবস্থায় সূরা পড়া যাবে কি
ইসলামিক চিন্তাবিদদের বিশুদ্ধ মত হলো, হায়েজ অবস্থায় মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে না। তাদের মত হলো পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে কুরআন মাজীদ হাতে নিয়ে বা মোবাইলে কুরআন মাজীদের তেলাওয়াত বা কোরআন মাজীদের মুখস্ত কোন সূরার তেলাওয়াত বা কোরআন মাজীদের পরিপূর্ণ কোন আয়াতের তেলাওয়াত করা যাবে না। এই সময় কোরআন পড়া থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে এটা আল্লাহর হুকুম। তবে এই সময় তিনি তাসবীহ, তাহলীল, জিকির, দরুদ, কুরআন থেকে বর্ণিত দোয়া গুলো পড়তে পারেন। কুরআন মাজীদের পূর্ণ আয়াত বা সূরা তেলাওয়াত করা যাবে না।
হায়েজ অবস্থায় দরুদ পড়া যাবে কি
সংখ্যা গরিষ্ঠ ইসলামিক স্কলারদের মত হলো, হায়েজ অবস্থায় দোয়া, দরুদ, ইস্তেগফার পাঠ করা যাবে। কুরআনি দোয়া গুলো করা যাবে। তবে কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে না। কোরআন মাজীদের মুখস্ত সূরা বা পূর্ণ কোন আয়াত তেলাওয়াত করা যাবে না। এ সময় আপনি অযূ করে তাসবীহ, তাহলীল, জিকির এগুলো করতে পারেন।
হায়েজ অবস্থায় হাদিস পড়া যাবে কি | মাসিক হলে কি হাদিসের বই পড়া যায়
হায়েজ অবস্থায় হাদিসের গ্রন্থ পড়া যাবে। এ সময় শুধু মহিলারা কোরআন তেলাওয়াত করা থেকে বিরত থাকবে। পিরিয়ড় চলাকালীন সময়ে মহিলারা ইসলামিক বই, মাসলা-মাসায়েলের বই পড়তে পারবেন। এতে কোন সমস্যা নেই।
হায়েজ অবস্থায় কায়দা পড়ার বিধান
পিরিয়ড় চলাকালীন একজন নারীকে বেশ-কিছু নিষেধাজ্ঞার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এই সময় ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক নামাজ পড়া, কুরআন তেলাওয়াত করা নিষেধ। তো আপনারা হায়েজ অবস্থায় কায়দা পড়ার বিধান জানতে চেয়েছেন। হায়েজ অবস্থায় নারীরা কায়দা পড়তে পারবে। কারণ, এখানে কুরআনের কোন আয়াত থাকে না। তাই হায়েজ অবস্থায় নারীরা কায়দা স্পর্শ করতে পারবে এবং পাঠ করতে পারবে।
আরো পড়ুনঃ- মহিলারা আযানের আগে নামাজ পড়া যাবে কি জেনে নিন
তবে আমপাড়ায় যেহেতু কুরআনের আয়াত বা সূরা রয়েছে তাই হায়েজ অবস্থায় এটি পড়া যাবে না। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমদের মত হলো, হায়েজ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে না।
হায়েজ অবস্থায় কি দোয়া কবুল হয়
হায়েজ অবস্থায় সুন্দর করে অযূ করে দোয়া করা যেতে পারে। এ সময় আপনি কুরআন থেকে বর্ণিত দোয়া অজিফা হিসেবে, তাসবীহ, তাহলীল, জিকির, দরুদ এগুলো পাঠ করতে পারেন। আপনার মনের আশা-আকাঙ্কা পূরণের জন্য দোয়া আপনি যেকোন সময় করতে পারেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো। (সুরা মুমিন, ৬০)
হায়েজ অবস্থায় কি কি করা যাবে না
হায়েজ অবস্থায় কি কি কাজ করা যাবে না তা নারীদের জানা দরকার। কেননা, হায়েজ চলাকালীন সময়ে একজন নারীকে বিভিন্ন বিধি নিষেধের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এখন আমরা জানব হায়েজ অবস্থায় কি কি করা যাবে না তা সম্পর্কে।
- নামাজ পড়া যাবে না।
- রোযা রাখা যাবে না।
- কুরআন মাজীদ স্পর্শ করা এবং তেলাওয়াত করা যাবে না।
- মসজিদে প্রবেশ করা যাবে না।
- শারীরিক মিলন করা যাবে না।
- কাবাঘর তাওয়াফ করা যাবে না।
- স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়া যাবে না।
মাসিক অবস্থায় ওযু করা যাবে কি
প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষ সকলে ওযূ অবস্থায় থাকবে এটা সুন্নাহ সম্মত। মাসিক অবস্থায় ওযূ করা যাবে কোন সমস্যা নেই। মাসিক অবস্থায় নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে না। আপনি সুন্দর করে ওযূ করে জায়নামাজ বিছিয়ে দোয়া, দরুদ, জিকির, তাসবীহ, তাহলীল এগুলো পাঠ করতে পারেন। হায়েজ অবস্থায় কি কি কাজ করা যাবে না তা আমরা আগের পর্বে আলোচনা করেছি।
হায়েজ অবস্থায় কুরআন শোনা যাবে কিনা | মাসিক অবস্থায় কুরআন শোনা যাবে কি
মাসিক অবস্থায় কি আমল করা যায় |পিরিয়ডের সময় কি কি আমল করা যায়
সালাত আদায়, রোযা রাখা, কুরআন তেলাওয়াত করা, কুরআন স্পর্শ করা, মসজিদে প্রবেশ করা, স্বামী সহবাস, কাবাঘর তাওয়াফ করা, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক প্রদান এই গুলো কাজ ছাড়া মাসিক অবস্থায় নারীরা সকল নেক কাজ করতে পারবে। মাসিক অবস্থায় নারীরা যে সকল কাজ করবেঃ-
- কুরআনে বর্ণিত দোয়া অজিফা হিসেবে পড়বে। কোরআনের পূর্ণ আয়াত বা সূরা তেলাওয়াত করবে না।
- তারা তাসবীহ, তাহলীল, জিকির, দোয়া, দরুদ, ইস্তেগফার পড়বে।
- কুরআন পড়বে না, তবে কুরআন মাজীদের তেলাওয়াত শুনতে পারবে।
- হাদীসের গ্রন্থ, ইসলামিক বই পড়তে পারবে। ওয়াজ-মাহফিলের আলোচনা শুনতে পারবে।
মাসিক অবস্থায় দোয়া ইউনুস পড়া যাবে কি
মাসিক অবস্থায় দোয়া ইউনুস পড়া যাবে কোন সমস্যা নাই। এ সময় কুরআনে বর্ণিত দোয়া গুলো অজিফা হিসেবে পড়া যাবে। শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচতে কুরআনের যে আয়াত গুলো মানুষ পড়ে সেগুলো জিকির হিসেবে পড়লে গুনাহগার হবেন না, একদল আলেম এমনটা মনে করেন। মাসিক অবস্থায় আপনি কোন ধরণের বিপদের মুখো-মুখি হলেন এমনতা অবস্থায় বিপদমুক্ত হতে আপনি দোআ ইউনুস পড়তে পারেন। এমনি অবস্থাতেও আপনি দোআ ইউনুস পড়তে পারেন।
অনিয়মিত মাসিক হলে নামাজ পড়া যাবে কি
অনিয়মিত মাসিক হলে নামাজ পড়া যাবে কি এই বিষয়ে জানতে এই ১) লিংকে ২) লিংকে ক্লিক করুন। আশা করি আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
পিরিয়ড অবস্থায় কি তাসবিহ পড়া যাবে
পিরিয়ড় অবস্থায় সাধারণ দোয়া, দরুদ, তাসবিহ, তাহলীল, জিকির, ইস্তেগফার করা যাবে। এই সময় সালাত আদায়, রোযা রাখা, কুরআন তেলাওয়াত করা, কুরআন স্পর্শ করা, মসজিদে প্রবেশ করা, স্বামী সহবাস, কাবাঘর তাওয়াফ করা, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক প্রদান এই কাজ গুলো থেকে বিরত থাকতে হবে।
লেখকের মন্তব্য
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ এই পোস্টে আমরা হায়েজ অবস্থায় মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। এই ধরণের তথ্যবহুল ইসলামিক পোস্ট প্রতিনিয়ত আমরা আমাদের সাইটে পাবলিশ করে থাকি।
এতক্ষণ ধৈর্য্য ধরে পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। পরবর্তীতে আলোচনা হবে ভিন্ন কোন পোস্ট নিয়ে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন।
আপনি পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url