ওযু ছাড়া মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি বিস্তারিত জেনে নিন

এই আর্টিকেলে আমরা ওযু ছাড়া মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। কুরআন তেলাওয়াত করতে হলে পূর্বে ওযু করতে হয় এটা স্বাভাবিক। মোবাইলে কুরআনের অ্যাপস পাওয়া যায়। অনেকে সেই অ্যাপস থেকে কুরআন তেলাওয়াত করে। এখন প্রশ্ন হলো ওযু ছাড়া মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি ? তারই ধারাবাহিকতায় আমরা এই আর্টিকেল তৈরি করেছি।

ওযু ছাড়া মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি বিস্তারিত জেনে নিন

মহাবিশ্বের মহাগ্রন্থ আল কুরআন তেলাওয়াত করার পূর্বে সুন্দর করে ওযু করা উত্তম। ইন্টারনেটের এ যুগে আপনি মোবাইল অ্যাপস এর মাধ্যমে অথবা গুগলে সার্চ করে কুরআন তেলাওয়াত করা যায়। ওযু ছাড়া মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি ? অনেকের সন্দেহ থাকে। চলুন তাহলে মূল আলোচনা শুরু করা যাক।

মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি | ফোনে কুরআন পড়া যাবে কি

জ্বি, মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে। মোবাইলে কুরআন পড়েন অথবা কাগজে লিপিবদ্ধকৃত কুরআন তেলাওয়াত করেন কোন সমস্যা নেই, আপনি সওয়াব পেয়ে যাবেন। অযু করে কুরআন তেলাওয়াত করা উত্তম। চেষ্টা করবেন অযু করে কুরআন তেলাওয়াত করার জন্য। সরাসরি কুরআন স্পর্শ করে তেলাওয়াত করলে অযু করতে হবে। মোবাইলে কুরআন তেলাওয়াত করতে অযু বাধ্যতামূলক নয়, তবে অযু করে তেলাওয়াত করা উত্তম।

ওযু ছাড়া মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি | ওযু ছাড়া মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি মাসিক আল কাউসার | মোবাইলে কোরআন স্পর্শ করা | মোবাইলে কুরআন পড়লে ওযু লাগবে | মোবাইলে কুরআন পড়তে ওযু লাগবে কি

পাথর, চামড়া, কাগজে লিপিবদ্ধ কোরআন মাজীদ স্পর্শ করার পূর্বে অযু করতে হবে। কারণ, লাওহে মাহফুজে যে কুরআন সংরক্ষণ করা হয়েছে তা কপি হলো এই পাথর, চামড়া, কাগজে লিপিবদ্ধকৃত কোরআন। কাজেই এই কুরআন স্পর্শ করার পূর্বে অযু করা প্রয়োজন। মোবাইলে কুরআন মাজীদ পড়ার বিষয়টি আধুনিক মাসআলা। সরাসরি কুরআন স্পর্শ করতে অযু দরকার।

আরো পড়ুনঃ- মহিলারা আযানের আগে নামাজ পড়া যাবে কি জেনে নিন

অনেক বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক স্কলারদের মতে, মোবাইলে বা মোবাইল অ্যাপসে কুরআন তেলাওয়াত করতে অযুর প্রয়োজন নেই। তাদের যুক্তি হলোঃ-

কুরআন মাজীদের উপর যদি কোন কিছুর আবরণ থাকে তাহলে তা স্পর্শ করতে অযুর প্রয়োজন নেই। ধরুণ, কোন বাক্সের মধ্যে কুরআন আছে তাহলে ঐ বাক্স ধরা যাবে কি ? উত্তরঃ ঐ বাক্স ধরতে কোন অযুর প্রয়োজন নেই, বিনা অযুতে ঐ বাক্স ধরা যাবে। কারণ, সেটার উপর আবরণ রয়েছে। অনুরুপভাবে মোবাইলে যে কুরআনের অ্যাপস রয়েছে ঐ অ্যাপস গুলোর উপরে ডিসপ্লে রয়েছে ( এখানে মোবাইলের ডিসপ্লে কে বোঝানো হয়েছে ) এতে সরাসরি কুরআন স্পর্শ করা হচ্ছে না। কাজেই এখানে কুরআন পড়তে ওযু করার প্রয়োজন নেই।

অন্যদিকে আরেকদল ইসলামিক স্কলারদের মত হলো, কুরআন মাজিদের সম্মান রক্ষার্থে অযু ছাড়া মোবাইল স্ক্রিনে দৃশ্যমান কুরআনের অংশ স্পর্শ করা উচিত নয়।

ওযু ছাড়া হাদিস পড়া যাবে কি

জ্বি, ওযু ছাড়া হাদিস পড়া যাবে। ওযু ছাড়া আপনি হাদিস, ইসলামিক বই, দোয়া, জিকির, তাসবিহ, ইস্তেগফার, দরুদ শরীফ পড়তে পারবেন। যখন আপনি কুরআন মাজীদ স্পর্শ করে তেলাওয়াত করবেন, যখন আপনি নামাজ পড়বেন তখন অযু করতে হবে। কুরআনের মুখস্ত সূরা তেলাওয়াত করতে আপনার অযু জরুরি না। তবে সবসময় অযু অবস্থায় থাকা উত্তম।

ওযু ছাড়া কুরআন পড়া যাবে কি | অযু ছাড়া কুরআন স্পর্শ আলকাউসার

মানুষকে হেদায়াতের পথ দেখানোর জন্য আল্লাহ কুুরআন মাজীদ অবর্তীর্ণ করেন। কোরআন দেখে, স্পর্শ করে পাঠ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই অযু করতে হবে এবং আপনার শরীর পাক হতে হবে। বীর্যপাত, যৌনমিলন, হায়েজ, প্রসব পরবর্তী সাদা স্রাব এই সময় মানুষের শরীর নাপাক হয়। কোরআন মাজীদ স্পর্শ করতে হলে আপনার শরীর পাক হতে হবে। মহিলারা নাপাক অবস্থায় কুরআনের কোন সুরা পূর্ণ তেলাওয়াত করতে পারবে না। তবে কোরআনের বর্ণিত দোয়া অজিফা হিসেবে পড়তে পারবে।

আরো পড়ুনঃ- বাচ্চা হলে আযান দেওয়ার নিয়ম জেনে নিন

মোবাইলে কুরআন তেলাওয়াত করার ক্ষেত্রে ওযু করা লাগবে না। তবে ওযু করে তেলাওয়াত করা উত্তম। মোবাইলে যে কুরআনের অ্যাপস রয়েছে ঐ অ্যাপস গুলোর উপরে ডিসপ্লে রয়েছে ( এখানে মোবাইলের ডিসপ্লে কে বোঝানো হয়েছে ) এতে সরাসরি কুরআন স্পর্শ করা হচ্ছে না। কাজেই এখানে কুরআন পড়তে ওযু করার প্রয়োজন নেই।

ওযু ছাড়া তাসবিহ পড়া যাবে কি

ওযু ছাড়া তাসবিহ পড়া যাবে। ওযু ছাড়া আপনি হাদিস, ইসলামিক গ্রন্থ, দোয়া, জিকির, দরুদ, ইস্তেগফার পড়তে পারেন। তবে কোরআন স্পর্শ করে তেলাওয়াত করার আগে, নামাজের আগে আপনাকে ওযু করতে হবে। গোসল ফরজ অবস্থায়, হায়েজের সময় নারীরা তাসবিহ পড়তে পারবে, কোরআনের বর্ণিত দোয়া পড়তে পারবে। তবে যাদের গোসল ফরজ হয়েছে, হায়েজের সময় কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে না বা কোরআনের কোন সুরা তেলাওয়াত করা যাবে না। গোসল ফরজ, হায়েজের সময় কোরআন তেলাওয়াত শুনতে পারবেন, উচ্চারন না করে কোরআনের লেখার উপর নজর বুলিয়ে নিতে পারবেন।

মোবাইল টেপ রেকর্ডারে সিজদার আয়াত শুনলে তার হুকুম কী হবে

যদি আপনি রেকর্ডকৃত ( মোবাইল, টেপ রেকর্ডারে, ইউটিউবে, ফেসবুকে ) কোরআন তেলাওয়াত শুনেন ঐ অবস্থায় যদি কোন সিজদাহ আয়াত আসে তাহলে আপনাকে সিজদাহ দিতে হবে না।

এখন আপনি যদি লাইভ বা সরাসরি ( টেলিভিশন, রেডিও ) কোরআন তেলাওয়াত শুনেন তাহলে ঐ অবস্থায় যদি কোন সিজদাহ আয়াত আসে তাহলে যিনি তেলাওয়াত করছেন এবং যিনি তেলাওয়াত শুনছেন উভয়কে সিজদাহ দিতে হবে।

শুয়ে শুয়ে মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে |হেলান দিয়ে কুরআন পড়া | শুয়ে মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি

জ্বি, শুয়ে শুয়ে মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে। কোরআনুল কারীম তেলাওয়াতে সর্বোত্তম নিয়ম হচ্ছে উঁচু স্থানে রেখে অযু করে বসে কোরআন তেলাওয়াত করা। তবে কেউ চাইলে শুয়ে, হেলান দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করতে পারবে। এ নিয়ে কোন বিধি-নিষেধ নাই। শুয়ে, হেলান দিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করলে আদবের খেলাফ হবে এমন কোন কথা কোথাও বলা হয় নি।

হাদিসে এভাবে এসেছে, নবী (সাঃ) আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করতেন।

মনে মনে কুরআন পড়া যাবে কি

ঠোঁঠ দিয়ে যেটা উচ্চারন করা হয় সেটাকে পড়া বলে, মনে মনে যেটা বলা হয় এটাকে পরিকল্পনা বলে। তাই কুরআন তেলাওয়াত করতে হলে মুখ দিয়ে শব্দ উচ্চারন করতে হবে এবং ঠোঁঠ নাড়াতে হবে। অন্তত, এতটুকু সাউন্ড করে তেলাওয়াত করতে হবে যাতে আপনি নিজে শুনতে পান। আপনি যদি শব্দ উচ্চারন না করেন, নিজেরা তেলাওয়াত যদি নিজে শুনতে না পান তাহলে সেটা তেলাওয়াত হবে না। কুরআন তেলাওয়াত করলে প্রতিটি হরফ উচ্চারনে যে ১০টি নেকী পাওয়া যায় আপনি সেটা পাবেন না। তাই কুরআন সাউন্ড করে তেলাওয়াত করাটা উত্তম। যাতে আপনি নিজে শুনতে পান।

নাপাক অবস্থায় দোয়া করা যাবে কি

দোয়া করার জন্য পাক, নাপাক এই শর্ত প্রযোজ্য নয়। নবী (সাঃ) সর্ব অবস্থায় আল্লাহর জিকির করতেন এবং আল্লাহর কাছে চাইতেন। কেবল টয়লেটে থাকা-কালীন সময়ে আল্লাহর জিকির, দোআ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাছাড়া মহিলারা হায়েজ, প্রসব পরবর্তী যে সময় ব্লিডিং হয় এ সময় তারা আল্লাহর কাছে দো’আ করতে পারবে। তাসবীহ, তাহলীল, জিকির, ইস্তেগফার, দরুদ পড়তে পারবে। নামাজ পড়া, ‍কুরআন তেলাওয়াত করা থেকে বিরত থাকবে। কুরআনের বর্ণিত দোয়া অজিফা হিসেবে পড়তে পারবে। আমি সর্ব-অবস্থায় আল্লাহর কাছে চাইতে পারবেন, দো’আ করতে পারবেন।

লেখকের মন্তব্য

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ আমরা এই পোস্টে ওযু ছাড়া মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। এই রকম ইসলামিক পোস্ট আমরা আমাদের সাইটে প্রতিনিয়ত পাবলিশ করে থাকি।

এতক্ষণ ধৈর্য্য ধরে পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। পরবর্তীতে আলোচনা হবে ভিন্ন কোন পোস্ট নিয়ে। আপনার সুস্থতা কামনা করে এখানে শেষ করছি। আমাদের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনি পদ্মা মেইলের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url